পূজন চন্দ্র বিশ্বাস: শোয়ার ঘর বা রান্না ঘর ছাড়া যেকোনো জায়গায় ঠাকুর ঘর বা ঠাকুরের আসন রাখার প্রচলন বেশির ভাগ বাঙালি বাড়িতেই লক্ষ্য করা যায়। অনেকে তো শোয়ার ঘরেও ঠাকুরের আসন স্থাপন করে থাকেন। কিন্তু শাস্ত্র মতে ঠাকুর ঘর হলো বাড়ির সব থেকে পবিত্রতম জায়গা। তাই তো বেশ কিছু নিয়ম মেনে তবেই ঠাকুর ঘর তৈরি করা উচিত। ঠাকুর ঘর স্থাপন করার সময় যা মেনে চলতে হবে।
১. এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে পূজার ঘর সব সময় পশ্চিম দিকে মুখ করে থাকা উচিত। আর পূজা করার সময় বসা উচিত পূর্ব দিকে মুখ করে। এমনটা করলে দেবের আশীর্বাদ মেলে। সেই সঙ্গে পরিবারের অন্দরে পজেটিভ শক্তির প্রভাব এতটা বেড়ে যায় যে সুখ এবং সমৃদ্ধি রোজের সঙ্গি হয়। প্রসঙ্গত, যাদের পক্ষে পশ্চিম দিকে মুখ করে ঠাকুর ঘর তৈরি করা সম্ভব নয়, তারা অন্তত পূর্ব দিকে মুখ করে বসে পূজা করার চেষ্টা করবেন। এমনটা করলেও বেজায় সুফল পাওয়া যায়।
২. অনেকেই বাড়িতে শিবলিঙ্গ স্থাপন করে থাকেন। এমনটা করা একেবারেই উচিত নয়। কারণ শাস্ত্র মতে শিবলিঙ্গ হলো শক্তির আধার। তাই ঠিক ঠিক নিয়ম মেনে যদি শিব লিঙ্গের পুজো করা না যায়, তাহলে কিন্তু বিপদ আর আজকাল সবাই এত ব্যস্ত যে এত নিয়ম মানার সময় কারও হাতেই নেই। তাই যে যাই বলুক না কেন, বাড়ির ঠাকুর ঘরে শিব লিঙ্গ রাখা একেবারেই চলবে না।
৩. শাস্ত্রমতে বাড়ির এমন জায়গায় ঠাকুরের আসন বা মন্দির স্থাপন করা উচিত যেখানে দিনের কোনও না কোনো সময় সূর্যের আলো প্রবেশ করে। আসলে এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে ঠাকুরের স্থানে যদি আলো-বাতাস না খেলে তাহলে খারাপ শক্তির প্রকোপ বাড়তে থাকে। ফলে নানাবিধ সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে আশঙ্কা যায় বেড়ে।
৪. ঠাকুরের আরাধনা করার সময় খেয়াল করে তাজা ফুল পরিবেশন করবেন। ভুলেও বাসি ফুল বা মালা ব্যবহার করবেন না। কারণ এমনটা করলে ঠাকুর ঘরের পবিত্রতা ক্ষুণœ হবে। ফলে দেবের শক্তি কমতে থাকবে। আর এমনটা হওয়া যে একেবারেই শুভ নয়, তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না। প্রসঙ্গত, যদি সম্ভব হয়, তাহলে প্রতিদিন তুলসি পাতা এবং গঙ্গা জলের সাহায্যে পুজো করা উচিত। কারণ এমনটা করলে ঠাকুর ঘরের পবিত্রতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে গৃহস্থের অন্দরে পজিটিভ শক্তির প্রভাবও বাড়তে থাকে।
৫. ঠাকুর ঘরের সামনে চামড়ার কোনো জিনিস রাখা চলবে না, বিশেষত জুতো এবং চামড়ার ব্যাগ। এখানেই শেষ নয়, এ ক্ষেত্রে আরও কতগুলো নিয়ম মেনে চলা উচিত। যেমন ধরুনÑ ঠাকুর ঘরের অন্দরে মৃত ব্যক্তির ছবি রাখা চলবে না। কারণ এমনটা করলে পূজার ঘরে নেগেটিভ শক্তির প্রভাব বাড়তে থাকবে, যা মোটেও শুভ নয়।
৬. এমনটা মানা হয় যে বাথরুমের খুব কাছকাছি ঠাকুরঘর বা ঠাকুরের আসন পাতলে তা বেজায় অশুভ। সেই সঙ্গে খেয়াল রাখবেন রান্না ঘরের থেকেও যেন ঠাকুরঘর নির্দিষ্ট দূরত্ব থাকে। আসলে এই দুই জায়গা একেবারেই পবিত্র নয়। তাই তো এমন জায়গার কাছাকাছি ঠাকুরকে রাখলে তার পবিত্রতাও ক্ষণœ হয়।
৭. রাত্রে শুতে যাওয়ার আগে ঠাকুরকে ঘুম পারিয়ে দেবেন। এ ক্ষেত্রে আলো নিভিয়ে ঠাকুরঘর বন্ধ করে দিতে পারেন, নয়তো একটা পর্দার সাহায্যে ঠাকুরকে আড়াল করে দিতে পারেন।
৯. প্রতিদিন পূজার শেষে ঘণ্টা বাজাতে ভুলবেন না যেন এমনটা করলে বাড়ির অন্দরে থাকা নেগেটিভ এনার্জি দূরে পালাবে। ফলে কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।